শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় প্রাইভেট
পড়তে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া
গেছে। ধর্ষণের পর শিশুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও চিকিৎসক তাকে
সেবা দেননি। ১১ দিন ধরে চিকিৎসা না পেয়ে শিশু মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
আজ সোমবার জেলা সদর থেকে কয়েকজন সাংবাদিক শিশুটির বাসায় গেলে তাদের সহায়তায় ডামুড্যায় থানায় মামলা করা হয়।
ডামুড্যা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খবির উদ্দিন বলেন, ধর্ষণের ঘটনায়
শিশুটির বাবা আজ সোমবার প্রতিবেশীর ছেলে রাব্বিকে আসামি করে নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। আসামি ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
আসামি রাব্বির বিরুদ্ধে এর আগেও এলাকার অনেক শিশুকে নির্যাতনসহ নানান ধরনের হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন এলাকার লোকজন।
শিশুটির পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, স্কুল শেষ করে গত ১৭
মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়তে পাশের বাড়ি রশিদ গোলন্দাজের মেয়ে খুকুমনির কাছে
যায় শিশুটি। শিশুটিকে পড়তে দিয়ে খুকুমনি বাড়ির বাইরে চলে যায়। এই সুযোগে
বাড়ির ভেতরে থাকা খুকুমনির বখাটে ভাই রাব্বি শিশুটির মুখ চেপে ধরে পাশবিক
নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ শিশুটির।
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটি বাড়ি ফিরলে নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়
পরিবার। চিকিৎসার জন্য প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক কপিলের কাছে নেয়
শিশুটির পরিবার। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ভর্তি করার পরামর্শ দেন ওই পল্লী চিকিৎসক। পরে স্বজনরা শিশুটিকে ডামুড্যা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
শিশুটির মা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ১৭ মার্চ প্রাইভেট পড়া শেষ না করেই
তাঁর শিশু মেয়ে চিৎকার দিতে দিতে বাড়ি ফিরে। পরে মেয়ের মুখে ধর্ষণের বর্ণনা
শুনে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত
চিকিৎসক মাহমুদ আসিফ তাঁদের জানিয়ে দেন, ধর্ষণের ঘটনায় আগে থানায় গিয়ে
পুলিশের কাছে রিপোর্ট (অভিযোগ) করতে হবে। তারপর পুলিশ বললে তাদের নির্দেশ
অনুযায়ী চিকিৎসা করা হবে।
শিশুটির মা বলেন, থানায় যেতে চাইলে রাব্বির পরিবারের হুমকির মুখে মাঝপথ
থেকে তাঁরা বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন। এরপর ভয়ে থানায় মামলা করতে পারেননি।
হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসাও করাতে পারেননি। গত ১১ দিন মেয়েটি চিকিৎসাহীন
অবস্থায় থাকতে থাকতে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহাসহ নানান ধরনের শারীরিক
সমস্যা হচ্ছে। ধর্ষণের পর মেয়ের বিদ্যালয়েও যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
কথা হয় শিশুটির প্রতিবেশী লাবণী আক্তারের সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে
বলেন, ‘১৭ মার্চ শিশুটির মায়ের আর্তচিৎকারে বাড়ি থেকে বাইরে এসে রক্তাক্ত
অবস্থায় শিশুটিকে দেখতে পাই। রাব্বির পরিবার এলাকার প্রভাবশালী রশিদ
গোলন্দাজের আত্মীয় হওয়ায় তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী এত দিন মামলা করতে সাহস
পায়নি শিশুটির পরিবার।’
ধর্ষণের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পাশেই রাব্বির বাড়ি গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
রাব্বি সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি তালাবদ্ধ করে পালায়। পাশের
বাড়ি গিয়ে পাওয়া যায় রাব্বির বোন ও শিশুটির প্রাইভেট শিক্ষক খুকুমনিকে।
খুকুমনি বলেন, প্রাইভেট পড়া শেষ করে বাইরে চলে যায় শিশুটি। পরে কীভাবে কী
হয়েছে এ ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই।
শিশু মেয়েটিকে চিকিৎসা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডামুড্যা উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহমুদ আসিফ বলেন, ‘শিশুটিকে
ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর হাসপাতালে আনা হয়।
শিশুটির পরিবারকে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করে আসতে বলা হয়েছিল। তারপর
চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছি শিশুটির পরিবারকে। থানায়
যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে গেলেও আর ফিরে আসেনি শিশুটির পরিবার। তাই চিকিৎসা
দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ আগে চিকিৎসা নাকি পুলিশে রিপোর্ট জানতে চাইলে ডা. মাহমুদ আসিফ বলেন,
‘আমার জানা মতে পুলিশ কেস হলে আগে পুলিশে রিপোর্ট। তারপর চিকিৎসা।’
তবে ডা. মাহমুদ আসিফের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন জেলার
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মশিউর রহমান। তিনি
এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কোনো ইমার্জেন্সি রোগী এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে
সেবা দেবে। এরপর ভিকটিমরা চাইলে মামলা করবে কি করবে না সেটা তাদের ওপর
নির্ভর করে। কিন্তু আগে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। যদি ওই চিকিৎসক (ডা.
মাহমুদ আসিফ) শিশুটিকে সেবা না দিয়ে থাকেন তবে ঠিক করেননি। বিষয়টি
অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’